এয়ার হোস্টেস কি ? কীভাবে হবেন?

“এয়ার হোস্টেস কি ? কীভাবে হবেন?” বা বিমানবালা হলেন বিমান সংস্থার কেবিন ক্রু-এর একজন সদস্য। তাদের প্রধান কাজ হল বিমানের যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আরাম নিশ্চিত করা।

আপনি যদি জানতে চান “এয়ার হোস্টেস কি ? কীভাবে হবেন?” তবে আপনাকে কিছু মৌলিক দায়িত্ব এবং দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।

ঐতিহাসিকভাবে, এই শব্দটি মূলত মহিলা কেবিন ক্রুদের বোঝাতে ব্যবহৃত হত, তবে বর্তমানে “কেবিন ক্রু” শব্দটি জেন্ডার-নিরপেক্ষ এবং পুরুষ ও মহিলা উভয়কেই বোঝায়।একজন এয়ার হোস্টেসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল:

* যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা: উড্ডয়নের আগে নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মাবলী সম্পর্কে যাত্রীদের অবগত করা, নিরাপত্তা সরঞ্জাম (যেমন অক্সিজেন মাস্ক, লাইফ জ্যাকেট) ব্যবহারের পদ্ধতি দেখানো এবং জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সাহায্য করা।

* গ্রাহক পরিষেবা প্রদান: যাত্রীদের স্বাগত জানানো, তাদের আসনে বসতে সাহায্য করা, খাদ্য ও পানীয় পরিবেশন করা এবং তাদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দেওয়া ও প্রয়োজন মেটানো।

* কেবিনের ব্যবস্থাপনা: কেবিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও সরবরাহ নিশ্চিত করা। * প্রাথমিক চিকিৎসা: প্রয়োজনে যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা।

* যোগাযোগ: ককপিটের ক্রু এবং অন্যান্য কেবিন ক্রুদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা।

* নিয়মকানুন মেনে চলা: বিমান সংস্থার এবং বিমান চলাচলের নিয়মকানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা।এয়ার হোস্টেস হওয়ার জন্য সুন্দর ব্যক্তিত্ব, চমৎকার যোগাযোগের দক্ষতা, ধৈর্য্য এবং জরুরি পরিস্থিতিতে শান্ত থাকার ক্ষমতা অত্যাবশ্যক। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং তবে আকর্ষণীয় পেশা, যেখানে মানুষকে সাহায্য করার এবং বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের সুযোগ থাকে।

এয়ার হোস্টেস হওয়ার জন্য আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:

যোগ্যতা: * শিক্ষাগত যোগ্যতা: আপনাকে অবশ্যই যেকোনো স্বীকৃত বোর্ড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (10+2) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। কিছু এয়ারলাইন্স স্নাতক ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেয়।

* বয়স: সাধারণত, আবেদনকারীর বয়স 18 থেকে 27 বছরের মধ্যে হতে হয়। তবে, কিছু এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা ভিন্ন হতে পারে।

* শারীরিক যোগ্যতা: * উচ্চতা: মহিলা প্রার্থীদের জন্য ন্যূনতম উচ্চতা 155 সেমি এবং পুরুষ প্রার্থীদের জন্য 170 সেমি হওয়া আবশ্যক। কিছু এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে এটি পরিবর্তিত হতে পারে।

* ওজন: উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওজন থাকতে হবে। * দৃষ্টিশক্তি: সাধারণত 6/6 দৃষ্টিশক্তি প্রয়োজন, তবে কিছু ক্ষেত্রে কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

* স্বাস্থ্য: প্রার্থীকে অবশ্যই সুস্থ এবং রোগমুক্ত হতে হবে।

* অন্যান্য যোগ্যতা: * সাবলীলভাবে ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে। অন্যান্য ভাষা জানা থাকলে তা অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। * সুন্দর ব্যক্তিত্ব এবং ইতিবাচক মনোভাব থাকতে হবে। * उत्कृष्ट যোগাযোগের দক্ষতা এবং গ্রাহক পরিষেবা প্রদানের মানসিকতা থাকতে হবে। * দলবদ্ধভাবে কাজ করার ক্ষমতা এবং ধৈর্য্য থাকতে হবে। * পোশাক এবং সাজসজ্জার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। শরীরে দৃশ্যমান ট্যাটু বা ছিদ্র থাকা উচিত নয়।

প্রশিক্ষণ: * বিভিন্ন এভিয়েশন এবং হসপিটালিটি ইনস্টিটিউট এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং কোর্স প্রদান করে। এই কোর্সগুলির মধ্যে কিছু জনপ্রিয় হল:

* ডিপ্লোমা ইন কেবিন ক্রু/এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং * সার্টিফিকেট কোর্স ইন এয়ার হোস্টেস/কেবিন ক্রু * ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) ইন এভিয়েশন * মাস্টার অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) ইন এভিয়েশন ম্যানেজমেন্ট * এই কোর্সগুলির সময়কাল সাধারণত 6 মাস থেকে 1 বছর পর্যন্ত হতে পারে। কোর্সের মধ্যে কেবিন নিরাপত্তা, প্রাথমিক চিকিৎসা, গ্রাহক পরিষেবা, গ্রুমিং এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশ, খাদ্য ও পানীয় পরিষেবা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মোকাবিলার প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

নিয়োগ প্রক্রিয়া: * বিভিন্ন এয়ারলাইন্স তাদের নিজস্ব নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। সাধারণত, নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে নিম্নলিখিত ধাপগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকে: * লিখিত পরীক্ষা (কিছু ক্ষেত্রে) * গ্রুপ ডিসকাশন * ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার * শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষা * নির্বাচিত প্রার্থীদের এয়ারলাইন্সের নিজস্ব ট্রেনিং স্কুলে আরও নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: * আবেদন করার আগে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের যোগ্যতার মানদণ্ড ভালোভাবে জেনে নিন, কারণ এগুলি ভিন্ন হতে পারে। * যোগাযোগের দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপর জোর দিন। * সাক্ষাৎকারের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিন।আশা করি এই তথ্যগুলি আপনাকে এয়ার হোস্টেস হওয়ার পথে সাহায্য করবে।

কলকাতায় বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য এয়ার হোস্টেস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল:

* ফ্রাঙ্কফিন ইনস্টিটিউট অফ এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং (Frankfinn Institute of Air Hostess Training): এদের পার্ক স্ট্রিটে একটি কেন্দ্র রয়েছে এবং এটি খুব জনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠান। Justdial-এ এর রেটিং ৫ এবং ২.৪ হাজারের বেশি রিভিউ রয়েছে।

* অ্যাপটেক এভিয়েশন অ্যান্ড হসপিটালিটি একাডেমি (Aptech Aviation & Hospitality Academy): এদেরও কলকাতায় একাধিক কেন্দ্র রয়েছে, যার মধ্যে পার্ক স্ট্রিট এবং হাজরায় অবস্থিত কেন্দ্রগুলি উল্লেখযোগ্য। Justdial-এ এদের রেটিং ৪.৬ এবং ৯৫টি রিভিউ রয়েছে।

* এপিটি অ্যাডভান্টেজ (APT Advantage): এদের একটি কেন্দ্র কলকাতায় রয়েছে এবং তারা প্লেসমেন্টের উপর জোর দেয়। তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা থাইল্যান্ডে ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামও প্রদান করে।

* জেটি এভিয়েশন (JT Aviation): এদেরও কলকাতায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে এবং তারা কেবিন ক্রু ট্রেনিং-এর জন্য পরিচিত।

* ডিএফ্লাই ইন্টারন্যাশনাল (Dfly International): এদের ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়েছে যে এটি কলকাতার অন্যতম পুরনো, বৃহত্তম এবং সুন্দর এয়ার হোস্টেস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

* কলকাতা এয়ার হোস্টেস একাডেমি (Kolkata Air Hostess Academy): এটিও একটি পরিচিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং তাদের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভাল প্লেসমেন্টের রেকর্ড আছে বলে তারা দাবি করে।এই কেন্দ্রগুলি সাধারণত এয়ার হোস্টেস হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দিক যেমন – কেবিন নিরাপত্তা, প্রাথমিক চিকিৎসা, গ্রাহক পরিষেবা, ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে মোকাবিলার প্রশিক্ষণ প্রদান করে।বিভিন্ন কোর্সের ফি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং কোর্সের ফি ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ১,০০,০০০ টাকা বা তারও বেশি হতে পারে। এটি কোর্সের সময়কাল এবং প্রশিক্ষণের মানের উপর নির্ভর করে। কিছু প্রতিষ্ঠান কিস্তিতে ফি পরিশোধের এবং স্কলারশিপের সুবিধাও প্রদান করে।আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, আপনি এই কেন্দ্রগুলির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে কোর্সের বিস্তারিত তথ্য, ফি এবং ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

বিমানবালাদের বেতন বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে,

যেমন: * এয়ারলাইন্স: দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের মধ্যে বেতনের পার্থক্য দেখা যায়। সাধারণত, আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলি বেশি বেতন প্রদান করে। কিছু প্রধান এয়ারলাইন্স যেমন – এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট এবং ভিস্তারা তাদের নিজস্ব বেতন কাঠামো অনুসরণ করে।

* অভিজ্ঞতা: নতুন বিমানবালাদের তুলনায় অভিজ্ঞ বিমানবালাদের বেতন বেশি হয়। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সিনিয়র কেবিন ক্রু বা ইন-ফ্লাইট সুপারভাইজার পদে পদোন্নতির সুযোগ থাকে, যা বেতনের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটায়।

* রুটের ধরন: ডমেস্টিক রুটের তুলনায় আন্তর্জাতিক রুটে কর্মরত বিমানবালাদের বেতন সাধারণত বেশি হয়, কারণ এই ফ্লাইটগুলি দীর্ঘ হয় এবং এতে বেশি সময় ও দায়িত্বের প্রয়োজন হয়।

* যোগ্যতা ও দক্ষতা: অতিরিক্ত ভাষা জানা বা বিশেষায়িত ট্রেনিং থাকলে বেতন বেশি হতে পারে। * কোম্পানির নীতি: প্রতিটি এয়ারলাইন্সের নিজস্ব বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নীতি থাকে।ভারতে একজন এয়ার হোস্টেসের আনুমানিক বেতন: * অভিজ্ঞতা স্তর:

* ফ্রেশার (০-৩ বছর): মাসিক ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। * মধ্য-স্তরের (৪-৯ বছর): মাসিক ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। * সিনিয়র (১০+ বছর): মাসিক ৮০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা বা তার বেশি হতে পারে। * আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স: আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সে কর্মরত বিমানবালাদের বেতন অনেক বেশি হতে পারে, যা মাসিক ১,৫০,০০০ থেকে ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত বা তারও বেশি হতে পারে। এর সাথে প্রায়শই আবাসন, বোনাস এবং ফ্লাইট ভাতা যোগ হয়।বিভিন্ন সংস্থার হিসেবে এই বেতন কাঠামো কিছুটা ভিন্ন হতে পারে। কিছু জনপ্রিয় এয়ারলাইন্সের আনুমানিক গড় বার্ষিক বেতন নিচে উল্লেখ করা হলো: * এয়ার ইন্ডিয়া: ₹৬.৯ লাখ * ইন্ডিগো: ₹৫.৪ লাখ * কাতার এয়ারওয়েজ: ₹১৫.৪ লাখ * এমিরেটস: ₹৮.২৮ লাখউল্লেখ্য, এই পরিসংখ্যানগুলি পরিবর্তনশীল এবং এটি শুধুমাত্র একটি সাধারণ ধারণা দেওয়ার জন্য। সঠিক তথ্যের জন্য নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে বা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে খোঁজ নেওয়া উচিত।

Comments/ Suggestions

%d bloggers like this: